ফ্রী ফায়ার গেম খেললে কি ক্ষতি হয়? বাস্তবতা, প্রভাব ও প্রতিকার

বর্তমান প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের মাঝে মোবাইল গেমের প্রতি আসক্তি দ্রুত গতিতে বাড়ছে। বিশেষ করে "Garena free fire" নামের একটি যুদ্ধ ভিত্তিক গেম সারা বিশ্বে তরুণদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে এই গেমটি নিয়ে নানা বিতর্ক ও প্রশ্ন উঠেছে-ফ্রী ফায়ার গেম খেললে কি ক্ষতি হয়? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার উদ্দেশ্যে আজকের এই আলোচনা।

ফ্রী ফায়ার গেম গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীদের মাঝে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। স্মার্ট ফোন ডাউনলোড সহ সুযোগ ও বিনামূল্যে খেলার ক্ষমতা এই গেমকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে। যদিও গেমটি বিনোদনের একটি উপায় কিন্তু এটি ধীরে বিতর্ক নিতান্ত কম নয়। অনেকেই, বলছেন তরুণরা ফ্রী ফায়ার নিয়ে এমনভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে-তাতে পড়াশোনা ও স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে। বাস্তব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন অনেক পরিবার। তাই এই বিষয়টি আজ আমাদের আলোচনার দাবি রাখি।

ফ্রী ফায়ার কি?

ফ্রী ফায়ার গেম: আসক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব

আজকাল বেশিরভাগ শিশু-তরুণের হাতে স্মার্টফোন। ফ্রি ফায়ারের একের পর এক চ্যালেঞ্জ, যুদ্ধ, পুরস্কার পাওয়ার উত্তেজনা ও প্রতিযোগিতার আনন্দ মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণ বাড়ায়। এ কারণে অনেকেই স্বাভাবিক আনন্দ থেকে ধীরে ধীরে গেমে আসক্ত হয়ে পড়ে।

গেম খেলার সময় মানসিক চাপ অনেকটাই কম মনে হলেও, পরবর্তীতে উদ্বেগ, অস্থিরতা,ইনসোমনিয়া (ঘুমের সমস্যা), রাগ-আক্রমণসহ নানা মানসিক সমস্যার সূত্রপাত হতে পারে। গবেষণা বলছে, ভিডিও গেম আসক্তি এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মনস্তাত্ত্বিক রোগের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

নিয়মিত ফ্রী ফায়ার গেম খেললে আরো যে সকল ক্ষতি হতে পারে-ফ্রী ফায়ার গেমে যেতার নেশা থেকে তৈরি হয় এক ধরনের মানসিক উত্তেজনা, যা খেলোয়ারদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাবে ফেলে দিতে পারে সহিংসতা ও আক্রমণাত্মক আচরণের দিকে। ফলে, গেমটি যতটা না বিনোদনের মাধ্যম, তার চেয়ে বেশি ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে তরুণ সমাজের জন্য যদি তা নিয়ন্ত্রণ ছাড়া খেলা হয়। এ কারণে অভিভাবকদের উচিত সন্তানের গেম খেলার সময় ও আচরণের প্রতি নজর রাখা এবং প্রয়োজনে পেশাদার মানসিকতা নয়।

ফ্রী ফায়ার গেম এর ক্ষতি
ফ্রী ফায়ার গেম এর ক্ষতি, ফ্রী ফায়ার একটি জনপ্রিয় মোবাইল গেম হলেও এর অনেক নীতিবাচক প্রভাব রয়েছে, বিশেষ করে শিশু ও কিশোর দের ওপর। এই গেম অতিরিক্ত সময় ব্যয় করার ফলে পড়াশোনার মনোযোগ কমে যায়। অনেকেই রাত জেগে খেলার কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং শরীরের সমস্যায় ভোগে। এছাড়া গেমটি সহিংস কনটেন্ট মানসিক বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে ব্যবহারকারীরা বেশি আক্রমণাত্মক বা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

ফ্রী ফায়ার গেম বিভিন্ন ইন-গেম কেনাকাটা রয়েছে, যেগুলো অনেক কিশোর পিতা মাতার অজান্তে অর্থ ব্যয় করে কিনে থাকে। এতে পারিবারিক কলহ এবং আর্থিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত গেম খেলা সামাজিক জীবন থেকেও দূরে সরিয়ে দেয়। তাই, সময় মত নিয়ন্ত্রণ না করলে ফ্রি ফায়ার গেমটি সত্যিই ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে

ফ্রী ফায়ার আসক্তির কারণ

ফ্রী ফায়ার গেম খেললে কি কি ক্ষতি হয়- বর্তমান প্রজন্মে কিশোর কিশোরীর মধ্যেও মোবাইল গেমর প্রতি প্রবল আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে গেরেনা ফ্রী ফায়ার (free fire) নামক ব্যাটেল রয়াল গেমটি তাদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে। তবে এই জনপ্রিয়তা যতই হোক না কেন ফ্রি ফায়ার গেমটি অনেকের জন্য এক প্রকার আসক্তি রূপ ধারণ করেছে। এ আসক্তির পেছনে রয়েছে বেশ কিছু মনস্তাত্ত্বিক ও প্রযুক্তিগত কারণ।

প্রথমত, ফ্রী ফায়ার গেমটি আকর্ষণীয় গেমপ্লে ও দ্রুতগতির ম্যাচ ব্যবহারকারীদের সহজে আকৃষ্ট করে। প্রতিটি ম্যাচে বেঁচে থাকার লড়াই, পরাজিত করা এবং শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা-এই থ্রিল ও উত্তেজনা কিশোরদের মনকে দারুন ভাবে প্রভাবিত করে। গেমটিতে থাকা বিভিন্ন চরিত্র, স্কিন, গিফট এবং অস্ত্রের কাস্টমাইজেশন নতুনত্বের অনুভব এনে দেয়, যা খেলোয়াড় কে বারবার খেলতে উদ্বুদ্ধ করে ।

দ্বিতীয়ত, ফ্রী ফায়ার গেম সামাজিক সংযোগের সুযোগ হয়েছে। এতে বন্ধুর সঙ্গে দল গঠন করে খেলা যায়, চ্যাট করা যায় এবং এর সঙ্গে যুদ্ধ করার অনুভূতি এক ধরনের ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব বা টিমস্পরিট তৈরি করে। অনেক সময় এই ভার্চুয়াল জগত বাস্তব জীবনের সম্পর্কের চেয়েও বেশি গুরুত্বপুন্ন হয়ে ওঠে।

তৃতীয়ত, পুরস্কার জেতার সুযোগ বং র‍্যাংকিং সিস্টেম খেলোয়ারদের মধ্য প্রতিযোগিতার মানসিকতা তৈরি করে। প্রতি লেভেল পার হওয়ার আনন্দ, তুন র‍্যাঙ্ক অর্জন, এবং বিজয়ী হওয়ার অনুভূতি এক ধরনের আত্মতৃপ্তি দেয়, যা আবার গেমে ফিরে আসার প্রবণতা বাড়ায়।

চতুর্থত, অনেক কিশোর বাস্তব জীবনে পড়াশোনা চাপ, পরিবারের সমস্যা বা একাকীত্ব থেকে মুক্তি পেতে এই গেমর আশ্রয় নেয়। গেমটি তাদের মানসিক প্রশান্তি মিথ্যা অনুভূতি দেয়, যা ধীরে ধীরে সত্তিকারের আসক্তের রূপ নাই।

সব মিলিয়ে দেখা যায়, ফ্রী ফায়ার গেম আসক্তির কারণ কেবল বিনোদনের খোঁজ নয়, বরং এর পিছে রয়েছে গভীর মানসিক ও সামাজিক উপাদান। তাই এই আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে সচেতনতা ও পরিমিত ব্যবহার একান্ত জরুরী।

ফ্রী ফায়ার গেম এর মানসিক ক্ষতি: কি কারনে হয় এবং কিভাবে এড়াবেন?

বর্তমান যুগে মোবাইল গেমর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে চলেছে। তার মধ্য গেরিনা ফ্রি ফায়ার গেমটি তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। তবে, এই গেম খেলার পাশাপাশি এর কিছু মানসিক ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরী। বিশেষ করে যখন বলা হয় ফ্রী ফায়ার গেমের মানসিক প্রভাব বা ফ্রী ফায়ার আসক্তি কিভাবে মস্তিষ্কে নিতে বাচে প্রভাব ফেলে।

গেমের কারণে অনেকেই মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও হতাশায় ভুগতে শুরু করে। গেমে হার মানা, পরাজিত হওয়া কিংবা দেরিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জড়িয়ে পড়া মানসিক অবসাদ তৈরি করে। এতে করে খেলোয়াড়দের মনোযোগ কমে যায় এবং তারা বাস্তব জীবনের সমস্যা মুখোমুখি হতে অক্ষম হয়। এছাড়া ফ্রি ফায়ার গেমের সহিংস ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা মুলক কনটেন্ট মানসিক বিকাশ নীতিবাচক প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে তরুণ ও কিশোরদের মধ্যে আক্রমণাত্মক মনোভাব জন্মায়।
অনেক সময় ফ্রি ফায়ার গেম আসক্তি সামাজিক বিচ্ছিন্নতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গেম খেলতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করলে বাস্তব জীবনে বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক দুর্বল হয়, যা মানসিক একাকীত্ব এবং বিষন্নতা বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও, নিয়মিত ঘুমের অভাবের ফলে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকারিতা কমে যায়, যার কারণে তিনটা শক্তি ও স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়।

সুতরাং, ফ্রী ফায়ার গেমের মানসিক ক্ষতি এড়াতে সমায়মত গেম খেলা নিয়ন্ত্রণ করা এবং বাস্তব জীবনের বিভিন্ন কর্মকান্ডে মনোযোগ দেওয়া খুবই জরুরী। প্রয়োজন হলে পরিবারের বা বিশেষজ্ঞের
সাহায্য আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।